ছাদাক্কাতুল ফিতরা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ননা ও পরিমান নিয়ে আলোচনা এই সাদাকার পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে, صاع ('সা') ও نصف صاع (নিসফে সা')। অতএব ১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এবং আধা সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়) অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি।
বিগত শুক্রবার ঢাকা বাইতুল মাকারামের প্রধান হুজুর এবং চার মাজাহাবের বিশিষ্ট আলেমদের নিয়ে একটা আলোচনা সবা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তারা ছাদাক্কাতুল ফিতরা আদায়ের নিয়ম হিসাবে এবছর বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্ধারণ করে সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা। ফত্ওয়া ও ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ নির্ধারণ করে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা। এই টাকা গরিব এতিম মিসকিন কে ঈদের নামাজের আগে প্রতিটা মুসলিমদের পরিশোধ করতে হবে। এটা রোজার ভুল ত্রুটি ক্ষমা ও মানুষের শারিরীক কল্যাণে জন্য সবার দেয়া উচিৎ।
ছাদাক্কাতুল ফিতরা নিয়ে হাদিসে যা কি আছে, ছাদাক্বাতুল ফিতর কোন বস্ত্ত দ্বারা আদায় ওয়াজিব প্রত্যেক দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করবে। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى رَجَاءٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَخْطُبُ عَلَى مِنْبَرِكُمْ يَعْنِى مِنْبَرَ الْبَصْرَةِ، يَقُولُ صَدَقَةُ الْفِطْرِ صَاعٌ مِنْ طَعَامٍ.
আবু রাজা‘ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে তোমাদের মিম্বরে অর্থাৎ বছরার মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দানরত অবস্থায় বলতে শুনেছি, ছাদাক্বাতুল ফিতরের পরিমাণ হ’ল মাথাপিছু এক ছা‘ খাদ্যদ্রব্য।(১৩)
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىَّ رضى الله عنه يَقُوْلُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ.
আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে প্রধান খাদ্য (طعام) চাউল। সেকারণ চাউল দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করাই উত্তম। খাদ্যশস্যের মূল্য দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর প্রদানের স্বপক্ষে কুরআন-হাদীছে স্পষ্ট কোন দলীল নেই। সুতরাং মুদ্রা দিয়ে ফিৎরা আদায় করা কোন বিশিষ্ট জনের তাক্বলীদ (অন্ধ অনুসরণ) বৈ কিছুই নয়।
আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করতে হ’লে নবী করীম (ছাঃ) প্রদর্শিত পন্থায়ই তা করা অপরিহার্য। তাছাড়া চার খলীফা, ছাহাবীগণ, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ সকলেই খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করেছেন। খাদ্যশস্যের মূল্যে ফিৎরা আদায়ের স্বপক্ষে একটি দুর্বল, মওযূ হাদীছও প্রমাণ হিসাবে পাওয়া যায় না। সুতরাং খাদ্যশস্য দিয়েই ফিৎরা আদায় করতে হবে।
খাদ্যশস্যের মূল্য দ্বারা ফিৎরা আদায় :
খাদ্যশস্য ব্যতীত অর্থ কিংবা দীনার-দিরহাম দিয়ে ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের কোন আমল পাওয়া যায় না। খাদ্যশস্যের স্বপক্ষেই হাদীছে এসেছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা খাদ্যশস্য (طعام) যব, খেজুর, পনীর, কিশমিশ দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম।(১৫)
طعام শব্দটির অর্থ হ’ল খাদ্য। পরিভাষায় যা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়, তাই طعام। طعام দ্বারা টাকা-পয়সা বুঝায় না। তাছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পূর্ব যুগ হ’তেই মক্কা-মদীনায় দিরহাম-দীনার প্রভৃতি মুদ্রার প্রচলন ছিল। কিন্তু তিনি এক ছা‘ খাদ্যশস্যের মূল্য হিসাবে দিরহাম প্রদানের নির্দেশ দেননি। বরং খাদ্যশস্য দিয়ে
ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় ওয়াজিব করেছেন।
১৩. নাসাঈ হা/২৫২২।
১৪. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৬।
১৫. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৬।
Post a Comment